হৃদপেশির ধর্ম (Properties of
cardiac muscle)
হৃদপেশির অধিকাংশ ধর্ম দেহের অন্যান্য পেশির অনুরূপ
হলেও হৃদপেশির কতগুলি বিশেষ বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয়।
হৃদপেশির ধর্মের এই বৈশিজগুলি নীচে উল্লেখ করা হলঃ
1. ছন্দোবদ্ধতা (Rhythmicity):
হৃদপেশির একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য এই যে, এই পেশি নিজেই
ছন্দোবদ্ধভাবে (rhythmically) সংকোচনের জন্য প্রয়োজনীয়
উদ্দীপনা অর্থাৎ হৃৎস্পন্দন (cardiac impulse) সৃষ্টি করতে
পারে। এই সহজাত (inherent)ছন্দোবদ্ধতা হৃৎপিন্ডের সব
অংশেই বর্তমান। তড়িৎশারীরবৃত্তীয়(electrophysiological)
পরীক্ষায় দেখা গেছে যে, হৃৎপিন্ডের
বিভিন্ন অংশে বিভিন্ন হারে হৃৎস্পন্দন সৃষ্টি হয়, যেমন-
এস.এ. নোড, এ.ভি. নোড, অলিন্দ এবং নিলয়ে।
হৃৎস্পন্দন সৃষ্টির হার যথাক্রমে মিনিটে 70-80, 40-60, 60
এবং 20-401
2. পরিবাহিতা (Conductivity):
হৃৎপিন্ডের পেসমেকার অর্থাৎ এস.এ. নোডে হৃৎস্পন্দন
সৃষ্টি হয়ে অলিন্দ ও নিলয় পেশিতে পরিবাহিত হয়। অস্থি
পেশির তুলনায় হৃদপেশিতে ধীরগতিতে হৃৎস্পন্দন
পরিবাহিত হয়। উদ্দীপনা অর্থাৎ হৃৎস্পন্দন(cardiac
impulse) পরিবহণের গতি
হিজের বান্ডিল ও পারকিনজি
তন্তুতে, নিলয় পেশিতে, এস.এ. নোডে এবং এ. ডি. নোডে
প্রতি সেকেন্ডে যথাক্রমে। মিটার, 0.4 মিটার, 0.05 মিটার
এবং 0.1 মিটার।
3. উত্তেজিতা এবং সংকোচনশীলতা(Excitability and contractility):
অন্যান্য পেশির মতো হ্দপেশিও উপযুক্ত উদ্দীপনায়
উদ্দীপিত হয় এবং সংকুচিত হয়ে সাড়া দেয়। হৃদপেশির
মূল সংকোচী একক (contractile unit) হল মায়োফাইব্রিল
যা অ্যাকটিন ও মায়োসিন প্রোটিন এককের সমন্বয়ে
গঠিত। সংকোচনের সময় এই দুটি প্রোটিন একক ATP-এর
উপস্থিতিতে পরস্পর যুক্ত হয়, যার ফলে হৃদপেশির দৈর্ঘ্যের
হ্রাস ঘটে অর্থাৎ হৃদপেশি সংকুচিত হয়। কিন্তু বিশ্রামরত
অবস্থায় অ্যাকটিন ও মায়োসিন পরস্পর পৃথক থাকে এবং
ATI-এর পুনঃসংশ্লেষ
ঘটে। ATPase উৎসেচক ATP-এর
বিয়োজন ত্বরান্বিত করে এবং Ca" ATPase উৎসেচকের
সক্রিয়তা বৃদ্ধি করে।
4. পূর্ণ বা ব্যর্থ প্রতিক্রিয়া (All or none response):
যদি কোনো নিশ্চল হৃদপেশিকে ক্রমবর্ধমান তড়িৎ
উদ্দীপনায় উদ্দীপিত করা হয় তবে দেখা
যায় যে, তড়িৎপ্রবাহ যখন ন্যূনতম ক্রিয়ামাত্রায় পৌঁছোয়,
একমাত্র তখনই সমগ্র পেশি কোশটি সংকুচিত হয়। অর্থাৎ
তড়িৎপ্রবাহ ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি করলে পেশিকোশের সংকোচন
ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পায় না। একটিমাত্র অস্থি পেশির ক্ষেত্রেই
এই বক্তব্য প্রযোজ্য, তবে সমগ্র পেশির ক্ষেত্রে তা প্রযোজ্য
নয়। সমরা পেশির ক্ষেত্রে তড়িৎপ্রবাহের বৃদ্ধির সঙ্গে পেশি
সংকোচনের বলও বৃদ্ধি পায়।
5. নিঃসাড়কাল (Refractory period):
প্রথম উদ্দীপনা
প্রয়োগের পরবর্তী যে সময়ের মধ্যে
দ্বিতীয় উদ্দীপনা পেশিতে সাড়া জাগাতে পারে না, তাকে
পেশির নিঃসাড়কাল (refractory period) বলে।
হৃদ্স্পেশির নিঃসাড়কাল যথেষ্ট দীর্ঘ এবং একে দু-ভাগে
বিভক্ত করা যায়, যথা-
(i)
পরম নিঃসাড়কাল (Absolute
refractory period):
এটি সম্পূর্ণ সংকোচনকালের মধ্যে ক্রিয়াশীল হয় এবং
কোনো উদ্দীপনা সেটি যতই তীব্র হোক না কেন এই
কালের মধ্যে পতিত হলে সাড়া জাগাতে ব্যর্থ হয়। এই
জন্য হৃদপেশিতে কখনও টিটেনাস পরিলক্ষিত হয় না।
(ii)
আপেক্ষিক নিঃসাড়কাল (Relative
refractory period):
আপেক্ষিক নিঃসাড়কাল পরম নিঃসাড়কালের
পরমুহূর্তে শুরু
হয় এবং এটি পেশির
প্রসারণকালের
প্রথমাংশে পড়ে। উদ্দীপনা যথেষ্ট
শক্তিশালী হলে
যুদ্স্পেশি এই সময়সীমার মধ্যে
সংকুচিত হয়ে সাড়া
দেয়।
হৃদপেশি দীর্ঘতম নিঃসাড়কালের অধিকারী হওয়ায় কখনও
অসাড় (fatigue) হয় না। কারণ সংকোচনের পর এই
সময়ের মধ্যে সে পূর্বাবস্থায় ফিরে আসতে পারে।
অলিন্দ পেশির নিঃসাড়কাল (0.15 সেকেন্ড) নিলয়
পেশির নিঃসাড়কালের (0.25-0.30 সেকেন্ড) চেয়ে
অপেক্ষাকৃত কম।
6. সিঁড়িক্রম ঘটনা (Staircase phenomena):
স্ট্যানিয়াসের বন্ধনী প্রস্তুত করে হৃৎপিন্ডের নিলয় পেশিকে
আবিষ্ট তড়িতের দ্বারা উদ্দীপিত করলে
হৃৎপিন্ডের কয়েকটি সংকোচন ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পায়, এরপর
আর বাড়ে না। এই ধরনের পরিবর্তনকে বলা হয়
সিঁড়িক্রম ঘটনা। এই ঘটনা শুধুমাত্র শাস্ত বা নিশ্চল
(quiscent)
হৎপিণ্ডেই
পরিলক্ষিত হয়। পরীক্ষালন্স ফল
থেকে জানা গেছে যে, এই অবস্থায় পেশিকোশের ভিতর
থেকে K' বেরিয়ে আসে। শান্ত হৃৎপিন্ডে বেশি পরিমাণে ৮'
সঞ্চিত হয় ফলে অ্যাকটিন ও মায়োসিনের সংযুক্তিতে বাধা
আসে। এই অবস্থায় উদ্দীপনা প্রয়োগ করলে পেশিকোশের
ভিতরে পটাশিয়াম যতই হ্রাস পায় হৃস্পেশির সংকোচন
প্রাথমিকভাবে ততই বৃদ্ধি পায়।
7. পেশিটান (Tonicity):
ঐচ্ছিক পেশির মতো হৃদপেশিতেও পেশিটান (muscle
tone) লক্ষ করা যায়।
তবে হৃদপেশির পেশিটানের ওপর
স্নায়ুর কোনো প্রকার নিয়ন্ত্রণ থাকে না। • পেসমেকার
কলা (Peacemaker tissue): এস.এ. নোডের উর্ধ্বপ্রান্ত
প্রশস্ত এবং প্রান্তদেশ ছুঁচোলো। এর দৈর্ঘ্য 10-20 মিমি, প্রস্থে
ও মিমি এবং পুরুত্ব । মিমি হয়। এটি
সালকাসটারমিনালিস বরাবর নীচের দিকে 2 সেমি পর্যন্ত
বিস্তৃত থাকে। এটি সূক্ষ্ম, লম্বাটে, দুই মুখ ছুঁচোলো
পরিবর্তিত পেশিকোশের সমন্বয়ে গঠিত। এদের ব্যাস
স্বাভাবিক হস্পেশির
এক-তৃতীয়াংশ। এইরূপ পেশিকোশে
নিউক্লিয়াস কেন্দ্রস্থলে অবস্থান করে এবং এরা অস্পষ্ট
অনুদৈর্ঘ্য ডোরাসম্পন্ন। পেশিকোশগুলি পরস্পর তম্বুজাল
গঠন করে এবং এদের
সারকোপ্লাজমের পরিমাণ
তুলনামূলকভাবে বেশি এবং মায়োফাইব্রিলের সংখ্যা
তুলনামূলকভাবে কম। তা ছাড়া এস.এ. নোডে পারকিনজি
তস্তুর ঘন তত্ত্বজাল (dense network) থাকে।
কাজ (Function):
এস.এ. নোড মিনিটে 70-৪০টি হৃৎস্পন্দন (cardiac
impulse) সৃষ্টি করতে
পারে। হৃৎপিন্ডের বাকি অংশের
ছন্দকে (rhythm) নিয়ন্ত্রিত করে বলে একে ছন্দ-নিয়ামক
বা পেসমেকার (Pacemaker) বলে। এস.এ. নোডের
সংকোচন তরজা থেকে যখন হৃদচক্র (cardiac cycle)
চলতে থাকে তখন একে
সাইনাস রিদম (sinus
rhythm) বলে।
হৃৎপেশির তড়িৎ ধর্ম
(Electrical properties
of Cardiac Muscle) :
(I) হৃৎপেশির resting কোশবিভব- 90 mV
(ii) ক্রিয়াবিভবের সময়
প্ল্যাটু বিভব পাওয়া যায় যেটি
100-300
m/sec স্থায়ী হয়।
(iii) হৃৎপেশি
স্বয়ংক্রিয় স্নায়ুকোশ দ্বারা উদ্দীপিত হয়।
(iv) এটি মধ্যমা পর্যায়ে
উদ্দীপ্ত হয়।
(v) এটি ধীর গতিতে
তড়িৎবিভব পরিবহণ করে।
(vi) এটি সম্পূর্ণ
নিঃসাড়কাল 180-200 m sec
(vii) হৎপেশি প্রতিটি কোশ
ছন্দবন্ধ পদ্ধতিতে বাইরের
উদ্দীপনার অনুপস্থিতিতে ক্রিয়াবিভব উৎপাদন ও পরিবহণ
করতে সক্ষম (coutorhytnminity)।
নোট : লেখার মাধ্যমে ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমা প্রার্থী।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন