অরুচি (Anorexia)
অরুচি বা খাবার ইচ্ছা না থাকা বা খাওয়ার রুচির অভাব বা স্বল্পতা, অনেকগুলি রোগে অন্যতম কারণ হিসাবে দেখা দিতে পারে। এই রোগগুলি পেট, অস্ত্র, যকৃৎ বা শরীরের অন্য ভাগের হতে পারে। এতে রোগীর খিদে পায় না, সে সারাদিন কিছু না খেয়ে কাটিয়ে দেয়। জেনে রাখা ভাল যে মস্তিষ্কের হাইপোথ্যালামাস কেন্দ্র খিদে নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। উল্লেখযোগ্য যে এই বিকারটি নিজে কোনো রোগ না হয়ে অন্য কোনো রোগের লক্ষণ রূপে দেখা দিয়ে থাকে। তাই রোগ হিসাবে এটিকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয় না।
কারণ (Etiology)
1. জ্বর, যেমন ম্যালেরিয়া ঘটিত জ্বর প্রভৃতি
সংক্রামক রোগ-ব্যাধি;
যকৃতের রোগ, যেমন, ন্যাবা রোগ/কামলা (Jaundice), যকৃৎ-প্রদাহ (Hepatitis).
2. যকৃতের ক্যানসার প্রভৃতি
পাকস্থলী ও অস্ত্রের রোগ, যেমন পেটে বা অস্ত্রে আলসার, ক্যানসার প্রভৃত্রি
বুকের বা ফুসফুসের রোগ যেমন, যক্ষ্মা প্রভৃতি
রক্তাধিক্য ঘটিত হৃদপিণ্ডের বিকলতা (Congestive heart failure) প্রভৃতি
ইউরিয়া রক্ততা (Uremia)
3, হাইপার থাইরয়েডিজম (Hyperthyroidism), এডিসন
রোগ (Addison's disease) প্রভৃতি
শোক, ভয়, দুশ্চিন্তা, ক্রোধ, উদ্বেগ, বিষণ্ণতা (Depression) ও অন্যান্য মনোরোগ।
এই কারণগুলির মধ্যে পেট, যকৃৎ ও অস্ত্রের গোলযোগ এবং মানসিক দুশ্চিন্তার দরুনই
অধিকাংশ ক্ষেত্রে অরুচি দেখা দিয়ে থাকে।
লক্ষণ ও উপসর্গ
1. রোগীর খিদে পায় না।
2. একটু-আধটু খাবার পরই
পেট ভরে গেছে বলে মনে হয়।
3. মুখের স্বাদ বদলে গেছে বলে মনে হয়।
4. রোগীর ঢেকুর ওঠে এবং মুখে জল আসে।
5. রোগী কোনো কাজে মনোনিবেশ করতে পারেনা।
6. রোগীর মেজাজ খিটখিটে হয়, সে সহজেই রেগে যায়।
7. দীর্ঘকাল ধরে অরুচিতে ভুগতে থাকলে রোগী দুর্বল হয়ে পড়ে এবং তার ওজন
কমে যায়।
8. রোগী সবসময় মানসিক উদ্বেগ ও দুশ্চিন্তায়ত থাকে।
প্রকারভেদ
অ্যানোরেক্সিয়া নারভোসা (Anorexia nervosa)
এই বিকারটি নিজের ওজন নিয়ে উদ্বিগ্ন এবং নিজের ওজন কম করার জন্য অহেতুক খাদ্যনিয়ন্ত্রণকারী মেয়েদের মধ্যে দেখা যায়। এতে রোগিনীর ওজন কম হতে হতে। পৃষ্টিতে ভোগার (Malnutrition) পরিস্থিতি দেখা দেয়। তাদের পরীক্ষা করলে কোনো কারণ দেখা যায় না।
এতে রোগী কখনো কম খেয়ে ক্ষুদিত থাকে, আর কখনো কিছুই খায় না। আবার কখনো কখনো অতিরিক্ত খেয়ে ফেলে। এই ধরনের রোগীদের মনে সবসময়ই ওজন বেড়ে যাওয়ার ভয় লেগে থাকে, যার দরুন খিদে থাকতেও কিছু খায় না কিন্তু বাইরে থেকে দেখলে তাদের পুরোপুরি সুস্থ মনে হয়। যে সব মেয়েরা তাদের সৌন্দর্য ও স্থূলতা নিয়ে খুব বেশি উদ্বিগ্ন থাকে তারাই সাধারণত এই বিকারটিতে বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকে। এই ধরনের মেয়েরা জেদি, একাকি, অন্তর্মুখি বা চাপা স্বাভাবের হয়ে থাকে।
রোগনির্ণয়
রোগীকে পরীক্ষা করলে নিম্নলিখিত চিহ্ন দেখা যায়-
1. দেহে মাংস স্বাভাবিকের চেয়ে কম থাকে
দেহে ভিটামিনের অভাব দেখা যায়;
ত্বক শুকিয়ে যায় এবং বলিরেখা দেখা যায়;
2. রক্তচাপ (Õlood pressure) ও শারীরিক তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে কমে যেতে
দেখা যায়;
3. মেয়েদের ঋতু ঠিক মতো হয় না এবং চুল শুকনো শুকনো দেখায়।
4 রোগী মানসিকভাবে সুস্থ হয়।
5. রক্তপরীক্ষা ও এক্স-রে করে কোনো রোগ আছে কিনা জানা যায়।
চিকিৎসা (Treatment)
এই বিকারটির জন্য দায়ী মূল কারণটিকে খুঁজে বের করে তার চিকিৎসা করতে হয়.
রোগীর মানসিক উদ্বেগ, ভয়, দুশ্চিন্তা প্রভৃতি দূর করার চেষ্টা করতে হবে। সুস্বাদু, পুষ্টিকর ও রুচিকর, খাবার খেতে হবে ও বেশি তেল-মশলা যুক্ত খাবার না খাওয়াই ভাল।
রোগীকে হজমের ও বলবর্ধক ওষুধ দিতে হবে। দরকার হলে কৃমিনাশক ওষুধ দিতে হবে।
Antoxid, Basitone Forte, Becadex, Beca Dexamin, Becosules. Becozyme Forte. Betonin, Cebexin, Cobadex Forte, Delirek, Sivogen, Maxamin Forte. Multibay, Nutrisan, Optineuron, Multibionta, Polybion, Surtex-T, Vimgran. Revital, Trinergic. Fefol প্রভৃতি ট্যাবলেট ও ক্যাঙ্গুল ব্যবহৃত হয়।
এছাড়া Cyproheptadine ট্যাবলেট ও সিরাপও ব্যবহার করা হয়। Neurobin Forte, Macraberin Forte, Ranodine প্রভৃতি ইঞ্জেক্শনও ব্যবহৃত হয়। রোগী খুব দুর্বল হয়ে পড়লে Anabolic steroid-এর ইঞ্জেকশন দেওয়া হয়।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন