প্রমেহ বা
গনোরিয়া
(Gonorrhea, Gonococcal Infections)
Ø
গনোরিয়া :- (১)
মূত্রনালির প্রচুর পুঁজময় নিঃসরণ, বিশেষভাবে
পুরুষদের মধ্যে |
(২) সঙ্গে মূত্রকৃচ্ছতা নিঃসরণের লেপন (Smear) নিলে
রোগ সৃষ্টির জীবাণু অণুবীক্ষণ যন্ত্রে ধরা পড়ে।
(৩) পুরুষের উপমুগ্ধ/উপশুক্রাশয় প্রদাহ (Epididymitis),
(৪)
প্রস্থিত গ্রন্থির (Prostate gland) প্রদাহ,
(৫) পরিমূত্রনালি প্রদাহ,
(৬) মলাশয়
প্রদাহ।
§ মহিলাদের
জরায়ুর প্রদাহ সঙ্গে থাকে পুঁজ ভর্তি নিঃসরণ। অথবা উপসর্গহীন প্রদাহ। কিন্তু
নিঃসরণ বা যৌনাঙ্গের লেপন নিলে রোগ-জীবাণু ধরা পড়ে, যোনি
প্রদাহ,
ডিম্বনালি প্রদাহ, মলাশয়
'প্রদাহ
ঘটে।
পুরুষ-মহিলা
দুজনেরই জ্বর-পিত্তানি (Rash), কন্ডরাঝিল্লি প্রদাহ (Tenosynovitis), সন্ধিপ্রদাহ।
লেপন
কালচার করলে বা সরাসরি স্ত্রী-পুরুষের যৌনাঙ্গের নিঃসরণের লেপন নিলে দ্বিকক্কাস (Intracellular
Diplococcus) জীবাণু দেখা যায়। বিশেষ করে মূত্রনালি-
জরায়ুর মুখ এবং মলাশয়ের নিঃসরণে।
Ø
রোগের কারণ -: Neisseria gonorrhoeae। এটি
গ্রাম ঋণাত্মক দ্বি- কক্কাস জীবাণু, চোখে পড়ার
মতো বহুরূপী শ্বেতকণিকা কোষের (Polymorphonuclear) মধ্যে
অবস্থান করে। রোগটি সাধারণত ১৫ থেকে ২৯ বছরের মানুষদের মধ্যে যৌনসংযোগের মাধ্যমে
ছড়ায়।
Ø
সুপ্তিকাল :- সাধারণত
২-৮ দিন।
Ø
লক্ষণ ও উপসর্গ
পুরুষদের
(১) প্রস্রাবে জ্বালা, দুধের মতো রস বেরোয় লিঙ্গ মুখ
দিয়ে।
(২) ১ থেকে
৩ দিন পরে মূত্রনালির ব্যথা আরো বেঁড়ে যায় আর নিঃসরণ হয়ে যায় হলদেটে, ক্রিমের
মতো,
পরিমাণে অনেক। কখনও রক্তও দেখা যায়।
(৩)
রোগ-লক্ষণ কমে গিয়ে পুরনো বা দীর্ঘস্থায়ী রোগে পরিণত হতে পারে অথবা বেড়ে গিয়ে
প্রন্থিত গ্রন্থি (Prostate), উপশুক্রাশয়ে, মূত্রনালির
ওপরের গ্রন্থিগুলিতে ছড়িয়ে যেতে পারে। ফলে আসে বেদনাদায়ক প্রদাহ।
(৪)
রোগ পুরনো বা একঘেয়ে হলে প্রস্থিত প্রদাহ এবং মূত্রনালি সেঁটে যেতে পারে।
(৫)
মলাশয়ের সংক্রমণ সমকামীদের মধ্যে দেখা যায়।
(৬)
ব্যতিক্রমী সংক্রমণ গলবিলে (Pharynx) দেখা
দিতে পারে পুরুষ ও নারীদের মধ্যে।
Ø মহিলাদের :- রোগ
ধরা পড়ে মাসিক/ঋতুস্রাবের সময় এবং লক্ষণগুলি হচ্ছে : মূত্রকৃচ্ছতা, বারবার
মূত্রত্যাগ এবং তার প্রবণতা এবং মূত্রনালি দিয়ে পুঁজময় নিঃসরণ। যোনি প্রদাহ, জরায়ুর
মুখের প্রদাহ। সংক্রমণ উপসর্গহীন হতে পারে এমতাবস্থায় কেবলমাত্র যোনির নিঃসরণের
সামন্য বৃদ্ধি এবং পরীক্ষা করলে জরায়ু মুখের সামান্য প্রদাহ দেখা যায়। রোগ পুরনো
হয়ে যেতে পারে এবং জীবাণুর গুদাম ঘর হয়ে একসময় জরায়ু, ডিম্বাশয়ের
পুরনো রোগ হয়ে আক্রান্ত মহিলাকে বন্ধ্যা করে দিতে পারে।
শ্রোণি
বা বস্তিদেশের আক্রমণে গনোকক্কাইদের সঙ্গ দেয় জীবাণু Chlamydiae এবং
কতগুলি অবায়ব জীবাণু (Anaerobes)। পায়ুর
যৌনসঙ্গমে বা যৌনপথে জীবাণু সংক্রমণ ছড়াতে পারে।
Ø
রোগ-নির্ণয়
মূত্রনালির
নিঃসরণ,
বিশেষ করে সংক্রমণের প্রথম সপ্তাহে পরীক্ষা
করলে বহুরূপী শ্বেতকণিকার ভেতরে দ্বি-কক্কাস গ্রাম ঋণাত্মক জীবাণু দেখা যায়।
মূত্রনালির লেপন (Smear) মহিলাদের বেলায় অনেক সময়
না-অর্থক (Negative) হয়, তাই
জীবাণু কালচার করাই সর্বোত্তম উপায়। গ্রাম রঙে রাঙ্গানো নমুনা না-অর্থক হলে Ligase Chain Reac- tion
(LCR) সবচেয়ে ভালো। এটা করাবেন মূত্রনালি ও জরায়ুর
মুখ থেকে তুলোয় করে নমুনা বা Swab নিয়ে।
Ø গনোরিয়ার
ছড়িয়ে পড়া :- গনোরিয়া
ছড়িয়ে পড়লে সর্বাঙ্গীণ (Systemic) জটিলতা
দেখা যায়। রোগ ছড়ায় রক্তের মাধ্যমে। গনোরিয়া জনিত রক্ত দূষণের বহিঃপ্রকাশ। অবিরাম
জ্বর-সন্ধিশূল (Arthralgia) এবং চামড়ার অপায় (Lesions) যা
ছোপ ছোপ ব্রণ থেকে ফুস্কুরি বা রক্তস্রাবী ক্ষতরূপে দেখা দিতে পারে। এগুলি আবার
প্রান্তসীমায় কম দেখা যায়।
গনোরিয়া
থেকে হৃদ-অন্তরাস্তর প্রদাহ বা মাত্রিকা প্রদাহ দেখা দিতে পারে। সন্ধি
প্রদাহ আর
কন্ডরা-ঝিল্লি প্রদাহ (Tenosynovitis) সাধারণ
ঘটনা। বিশেষ করে হাঁটু, গোড়ালি আর কব্জিতে। কখনো কখনো
একটি বা একটির বেশি সন্ধি আক্রান্ত হতে পারে। গনোকক্কাই জীবাণু গনোকক্কাস জনিত
সন্ধিপ্রদাহের অর্ধেকেরও কম রোগী থেকে বের করা যায়।
গনোরিয়ায়
চোখের প্রদাহ নেত্রাবন্ধুকলার (Conjunctiva) থলিতে
(Sac)
দেখা দেয়। নেত্রবাকলার পুঁজযুক্ত নিঃসরণ
একসময় চোখের মারাত্মক রোগ সৃষ্টি করতে পারে যদি না রোগ ধরা পড়ার সঙ্গে সঙ্গে
চিকিৎসা করা হয়।
Ø
তুলনামূলক রোগ নির্ণয়
গনোরিয়া
জনিত মূত্রনালি প্রদাহ, জরায়ুর মুখ প্রদাহ যোনি প্রদাহ
যা Chlamydia,
Trachomatis Gardnerella Vaginalis, Trichomonas, Candida এবং
আরো কিছু জীবাণু বা অণুজীব (যারা যৌনসংসর্গ ঘটিত রোগের সঙ্গে জড়িত) সৃষ্টি করে।
মূত্রনালি
প্রদাহ,
নেত্রবাকলা প্রদাহ, সন্ধিপ্রদাহ
গনোরিয়ার মিথ্যা আভাস দিতে পারে বা গনোরিয়ার সঙ্গে থাকতে পারে।
Ø
প্রতিরোধ
Ø প্রতিরোধ
করা যায়:-(১) শিক্ষা, (২)
যত্র তত্র অরক্ষিত অবস্থায় যৌন-সংসর্গ না করা। (৩) যৌন সঙ্গমে যান্ত্রিক বা
রাসায়নিক প্রতিরোধ ব্যবস্থা-নেওয়া, (৪)
প্রথম সুযোগে রোগ নির্ণয় করা, (৫)
কনডম ব্যবহার, (৬) যৌন সংসর্গে যাওয়ার আগে-পিছে
ঠিক মাত্রায় ওষুধ নেওয়া।
Ø
চিকিৎসা
(১) Ceftriaxone ১২৫
মি. গ্রা./পেশিতে অথবা Ciprofloxacin ৫০০ মি.
গ্রা. মুখে, (২) Ofloxacin ৪০০
মি. গ্রা./ অথবা Levofloxacin ২৫০ মি. গ্রা. মুখে খাওয়ার ওষুধ।
(২) Spectinomycin
১ গ্রাম/পেশিতে/দিনে একবার ব্যবহার করা যেতে
পারে যাদের Penicillin-এ স্পর্শ বিরাগ (Allergy) আছে।
পুরুষের গনোরিয়ায় ওপরের ওষুধ কাজ করবে না ভালো। কিন্তু মহিলাদের করবে। পুরুষদের Ceftriaxone খুবই
কার্যকরী। (৩) গলবিলের (Pharyngeal) গনোরিয়াতে Ceftriaxone আগের
মাত্রায় কার্যকরী অথবা Trimethoprim + Sulfamethoxazole সমানে
৫ দিন খেয়ে যেতে হবে। (৪) Chlamydial সংক্রমণে
থাকে বলে Doxycycline ১০০ মি. গ্রা./দিনে দুবার/৭ দিন
অথবা ১ মাত্রা Azithromycin ১ গ্রাম মুখে খাওয়াতে হবে। আজকাল
Penicillin-এর
বদলে অন্যান্য Antibiotic ব্যবহার করা হচ্ছে।
Azithromycin গণের
বাণিজ্যিক নামের ওষুধ। বন্ধনীতে কোং-র নাম। ATM (Indo co). AZ-I (Kopran), Azee
(Cipla). Azid (Indipharma). Azilide (Micro Nova)
Ø গনোরিয়ার
সঙ্গে যুক্ত অন্যান্য রোগের চিকিৎসা: (১)
ডিম্ববাহ প্রদাহ (Salpingitis), প্রন্থিত গ্রন্থির প্রদাহ, রক্তে
জীবাণু,
সন্ধিপ্রদাহ এবং অন্যান্য জটিলতার চিকিৎসা
করবেন। Penicillin
G ১০০ লাখ ইউনিট/শিরায়/দিনে ৫ দিন। Ceftriaxone ১
গ্রাম/দিনে/৫দিন/শিরায় ইনজেকশন অথবা মুখে খাওয়ার ওষুধ Fluoroquinolon ৫০০
মি. গ্রা./ দিনে দুবার অথবা Levofloxacin ৫০০
মি. গ্রা./দিনে একবার কার্যকরী। Levofloxacin গণের
বাণিজ্যিক নামের ওষুধ বন্ধনীতে কোংর নামঃ Alevo (Alkem), Fynal (Mankind), Levoday
(Recon), Voxin (Panacea), Zilec (FDC)।
(২) হৃদ
অন্তরাস্তর প্রদাহে: Ceftriaxone ১ গ্রাম/১২
ঘণ্টা অন্তর/শিরায়/ অন্তত তিন সপ্তাহ। এই গণের ওষুধের বাণিজ্যিক নাম, কোং-র
জন্য মেনিনজোকক্কাসজনিত মাত্রিকা প্রদাহ দেখুন।
গনোরিয়া
উত্তর মূত্রনালি প্রদাহ-জরায়ুর মুখ প্রদাহ (যার কারণ Chlamydia)-এর
জন্য এরিথ্রোমাইসিন-ডক্সিসাইক্লিন ও এজিথ্রোমাইসিন দিয়ে চিকিৎসা করতে হবে আগে
যেভাবে বলা হয়েছে।
বস্তি/শ্রোণি
দেশের প্রদাহের জন্য (১) Cefoxotin ২ গ্রাম
ইনজেকশন দেবেন অথবা Cefotetan ২
গ্রাম/শিরায়/প্রতি ১২ ঘণ্টায়। (২) Clindamycin ৯০০
মি. গ্রা./শিরায়/প্রতি ঘণ্টায় + Gentamicin ২
মি. গ্রা./কেজিতে। এর পরে Maintenance dose দেবেন
১/৫ মি. গ্রা./ কেজি হিসাবে প্রতি ৮ ঘণ্টা অন্তর। (৩) Cefoxitin ২
গ্রাম/ পেশিতে + Probenecid ১ গ্রাম/মুখে, একবার
মাত্র এরপর দেবেন Doxycycline ১০০ মি. গ্রা./দিনে দুবার।
নোট: এই
আর্টিকেল টি কেবল মাত্র আপনাদের নলেজের জন্য লিখা হয়েছে ।দয়া করে কেউ নিজে
চেষ্টা করবেন না ।কোন অসুবিধা বা রোগ আক্রান্ত হলে দয়া করে কোন ডক্টর এর সঙ্গে
পরামর্শ নিন।
নোট :
লেখার মাধ্যমে ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমা প্রার্থী।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন